পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য ১০ একর জমি নিয়ে বিপাকে বিসিএস প্রশাসন সমিতি

Admin
4 Min Read
পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য ১০ একর জমি নিয়ে বিপাকে বিসিএস প্রশাসন সমিতি

সংবাদ প্রতিবেদকঃ
টেকনাফে পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেল নির্মাণের জন্য ১০ একর জমি বরাদ্দ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি। জমির নির্ধারিত ইজারামূল্য পরিশোধ করতে পারছে না তারা। অন্যদিকে টাকা চেয়ে বারবার তাগাদা দিচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এ পটভূমিতে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সদস্যদের শেয়ার কিনতে আবারও চিঠি দিয়েছেন সমিতির সম্পাদক। এর আগে আট দফা চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে সদস্যদের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও ৪ মে সমিতির সম্পাদক যুগ্ম সচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান নতুন করে সদস্যদের কাছে শেয়ার কেনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সমিতির একজন সদস্য ন্যূনতম ৩টি ও সর্বোচ্চ ২০টি শেয়ার কিনতে পারবেন।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের যেসব সদস্য সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে শেয়ার কিনতে আগ্রহী, কিন্তু সমিতির সদস্য নন, তাঁরাও শেয়ার কিনতে পারবেন। তবে তাঁদের সদস্য ফি বাবদ ২০ হাজার টাকার পে—অর্ডার করে সমিতির নামে জমা দিতে হবে। জানতে চাইলে সমিতির সম্পাদক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৗস খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে নেওয়া প্রকল্পটি সফল করে তুলতে। শেয়ার কিনতে সমিতির সদস্যদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ প্রকল্পের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলে সদস্যরা বিনিয়োগ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কক্সবাজার থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ উপজেলায় ১ হাজার ৪১ একর জমিতে গড়ে উঠছে সাবরাং বিশেষ পর্যটন অঞ্চল। সেখানে পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেল নির্মাণে ২০২০ সালের ৩১ মে ১০ একর জমি বরাদ্দ পায় প্রশাসন সমবায় সমিতি। ৫০ বছরের জন্য জমির ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৬৭২ ডলার। তবে তিন বছরে এক টাকাও পরিশোধ করেনি তারা।
যদিও একই সময়ে ১০ একর জমি বরাদ্দ নিয়ে ইজারামূল্যের অর্ধেক পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। তাদের জমি ভরাটের কাজ শেষ। এখন আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ চলছে। পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আলমগীর কবির বলেন, বাকি টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে।
এর বাইরে সাবরাং প্রকল্পে জমির মূল্য পরিশোধ করে হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু করেছে গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার, গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, সানসেট বেসহ কয়েকটি কোম্পানি।
বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, সাবরাং বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেখানে জমি বরাদ্দের জন্য ব্যবসায়ীরা আবেদন করছেন। কিন্তু বিসিএস প্রশাসন সমবায় সমিতি জমি বরাদ্দ নিয়ে কাজে লাগাচ্ছে না। আবার নিজেরা স্বপ্রণোদিত হয়ে ছেড়েও দিচ্ছে না।
বিসিএস প্রশাসন সমবায় সমিতি টাকা পরিশোধ না করলে জমি হস্তান্তর করা হবে না জানিয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে জমির মূল্য বাড়ছে। এখন সমিতিকে বাড়তি মূল্য দিতে হবে। টাকা পরিশোধে প্রশাসন সমবায় সমিতিকে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত এ সমিতির সদস্য তিন হাজারের বেশি। জানা গেছে, জমির ইজারামূল্য পরিশোধে পাঁচবার সময় বাড়িয়েছে বেজা। সমিতির সদস্যদের শেয়ার না কেনা বিষয়ে জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সমবায় সমিতি এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে, একটিও সফলতার মুখ দেখেনি। নতুন প্রকল্পে কর্মকর্তারা আস্থা পাচ্ছেন না। সে কারণে বিনিয়োগ করছেন না। সমিতির আগের নেওয়া প্রকল্পে সফল না হওয়ায় কর্মকর্তারা সাবরাং প্রকল্পে বিনিয়োগে সাহস দেখাচ্ছে না বলে মনে করেন বেজার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই অর্থের নিরাপত্তা চান। ওই প্রকল্পের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো হলে কর্মকর্তারা তখন শেয়ার কিনতে আগ্রহী হবেন।’

Share this Article
Leave a comment